১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর। রণাঙ্গনে পাকিস্তানি হানাদারদের কফিনে পরাজয়ের শেষ পেরেক ঠুকে দেয় বন্ধুরাষ্ট্র ভারত। একাত্তরের রক্তঝরা এই দিনে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয় ভারত। এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের মুক্তির লড়াইয়ের গন্তব্য আরো নিশ্চিত করে দেয়। মাঠের যুদ্ধের পাশাপাশি কূটনৈতিক যুদ্ধেও পরাজিত হতে থাকে হানাদাররা। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নিতে প্রহর গুনতে থাকে বাংলার মুক্তিপাগল দামাল ছেলেরা।
এর আগে ৪ ডিসেম্বর মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ যুগ্ম দস্তখতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার অনুরোধ জানান। ইন্দিরা গান্ধী সরকার ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ইন্দিরা গান্ধী ফিরতি চিঠিতে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের ঘোষণা দিয়ে লেখেন, ‘আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, বর্তমান যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার প্রেক্ষাপটে ভারত সরকার আপনাদের স্বীকৃতিদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। …পথ যতই দীর্ঘ হোক না কেন এবং ভবিষ্যতে আমাদের জনসাধারণের যতই ত্যাগ স্বীকার করতে হউক না কেন, বিজয়মালা আমরা বরণ করবই।’
ভারতের স্বীকৃতি মুক্তিসেনাদের মনোবল বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। নতুন রাষ্ট্র তথা জন্মভূমি আদায়ের অভিলাষে শহর আর গ্রামের বাড়িঘর, মুক্তিসেনা ক্যাম্পগুলোতে উল্লাস বয়ে যায়। রক্তাক্ত ও নিষ্ঠুর একটি যুদ্ধের সূচনাকারী পাকিস্তানি হানাদারদের বিমান-তত্পরতা সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ভারতীয় বিমান বাহিনীর হিসাবমতে, ১২ ঘণ্টায় ২৩০ বার আক্রমণ চালানো হয় পাক ঘাঁটিগুলোতে। তেজগাঁও ও কুর্মিটোলা বিমানঘাঁটিতে ৫০ টনের মতো বোমা ফেলা হয়। বলতে গেলে পুরো আকাশ বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ডের দখলে চলে আসে। স্বাধীন হয় বাংলার আকাশ।
শুধু আকাশেই নয়, স্থলেও মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী ঢাকার দিকে এগিয়ে চলে বীরদর্পে। নিয়াজিসহ পাক সমরনায়করা বুঝলেন, মিত্রবাহিনী ঢাকার দিকে এগোবেই। নিয়াজি তাই অন্য পাক সমরনায়কদের সঙ্গে পরামর্শ করে সেদিনই সর্বত্র হুকুম পাঠিয়ে দিলেন—‘পুল ব্যাক’। নিয়াজির এমন নির্দেশ পেয়ে গোটা বাংলাদেশের পাক হানাদার বাহিনী মনোবল একেবারেই ভেঙে পড়ে।
