জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। গতকাল সোমবার রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পৃথক সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি এ প্রতিশ্রুতি দেন।
অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে জানিয়েছে। এর মধ্যেই কয়েক দিন আগে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এ ঘটনায় গণঅধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নুর গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনাকে কেউ কেউ ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন। সংঘর্ষে সেনাবাহিনীর পাঁচ সদস্যও আহত হয়েছেন।
আইএসপিআর জানায়, সরকার সব ধরনের মব সহিংসতার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। সেনাবাহিনীও জননিরাপত্তা ও শান্তি বজায় রাখতে সর্বদা কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সেনাবাহিনীর দৃঢ় অবস্থানের কথাও বারবার তুলে ধরেছেন সেনাপ্রধান। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পাহাড়ি-বাঙালি সবাই মিলেমিশে শান্তিতে বসবাস করছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সমান অধিকার রয়েছে।
সম্প্রতি জন্মাষ্টমী, দুর্গাপূজা, বড়দিন ও বৌদ্ধ বিহার সংক্রান্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধানের বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা রক্ষার অঙ্গীকার। পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানদের উপস্থিতি তাদের মনোবল বাড়িয়েছে।
সামরিক বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জায়েদুর রহমান জানান, ‘মব সহিংসতা’ এখন দেশের বড় আতঙ্ক। জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ১১১ জন এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন। এর পেছনে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, সামাজিক প্রতিপত্তি, অর্থনৈতিক ফায়দা, ধর্মীয় উন্মাদনা এবং ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য কাজ করে।
তিনি বলেন, কাঙ্ক্ষিত ফল না পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো—সশস্ত্র বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপকে কখনো কখনো মিডিয়ায় বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা, পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর নির্লিপ্ততা এবং দীর্ঘমেয়াদি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সেনাবাহিনীর অনভ্যস্ততা। তবে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে বাহিনীকে দৃঢ়তা প্রদর্শন করতে হবে।
অন্যদিকে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল (অব.) ড. মো. নাঈম আশফাক চৌধূরী মনে করেন, নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার পর অস্থিতিশীলতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, “ষড়যন্ত্রকারীরা সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানকে গালাগালি করছে মনোবল ভাঙার উদ্দেশ্যে। এর প্রতিরোধে অন্তর্বর্তী সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, পরিবর্তিত বিশ্ব রাজনীতির সুযোগ কাজে লাগাতে হলে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে। নইলে জাতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।