ভারতের তথাকথিত অর্থনৈতিক উত্থান ভয়াবহ চাপে পড়েছে। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির (৪.১৯ ট্রিলিয়ন ডলার) দাবিদার দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শুল্ক বৃদ্ধির কারণে বড় ধাক্কায় পড়তে যাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতের রপ্তানি খাতে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, যা দেশটির রপ্তানি নির্ভর অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
রপ্তানি খাতের ওপর বড় আঘাত
প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য লক্ষ্য করে এই শুল্ক আরোপিত হলে ভারতের জিডিপি থেকে প্রায় ১ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে। সবচেয়ে বেশি আঘাত আসবে বস্ত্র, রত্ন, চামড়া ও পাদুকা শিল্পে—যেখানে লক্ষ লক্ষ নারী শ্রমিক কর্মরত। ফলে ভারতের তথাকথিত “বৃদ্ধির গল্প” বাস্তবে নারী শ্রমিকদের কর্মসংস্থান ধ্বংসের কাহিনীতে রূপ নিচ্ছে।
চীনের মতো বৈচিত্র্য নেই ভারতের
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের মতো বৈচিত্র্যময় উৎপাদন ক্ষমতা ভারতের নেই। দেশটি ব্যাপকভাবে মার্কিন বাজারের ওপর নির্ভরশীল (১৮% রপ্তানি)। নতুন শুল্ক বৃদ্ধির ফলে ভিয়েতনামসহ অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ৩০–৩৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয়ে সুবিধা পাবে, আর ভারতীয় রপ্তানিকারকরা পিছিয়ে পড়বে।
নারীর জীবিকা ঝুঁকিতে
ভারতের রপ্তানিনির্ভর শিল্পে প্রায় ৫ কোটি শ্রমিক কাজ করে, যার মধ্যে একটি বড় অংশ নারী। শুল্ক বৃদ্ধির কারণে এসব খাতের রপ্তানি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এর ফলে লক্ষ লক্ষ ভারতীয় নারীর কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়বে।
ইতোমধ্যেই ভারতের নারী শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ বিশ্ব গড়ের (৩৭%–৪১.৭%) তুলনায় অনেক কম এবং চীনের ৬০ শতাংশের কাছাকাছিও নয়। আইএমএফ বলছে, লিঙ্গ বৈষম্য কমাতে পারলে ভারতের জিডিপি ২৭ শতাংশ বাড়তে পারত। কিন্তু বাস্তবে সাংস্কৃতিক বাধা, নীতিগত ব্যর্থতা ও কর্মসংস্থানের সীমাবদ্ধতা নারীদের এগিয়ে যেতে দিচ্ছে না।
দুর্বল ভিত্তির উপর “মহাশক্তি ভারত”
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই সংকট ভারতের অর্থনীতির প্রকৃত দুর্বলতাকে উন্মোচিত করছে। কথিত “মহাশক্তি ভারত” আসলে এক অস্থির ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে—যেখানে নারী শ্রমিক ও সাধারণ কর্মজীবীরাই সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী।