রাষ্ট্রপতির ছবি অপসারণ প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো ঘিরে যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, সেটি মূলত আইনি কাঠামোর অভাব থেকেই এসেছে। বাংলাদেশে সরকারি বা আধা-সরকারি অফিস, আদালত, দূতাবাস কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন ছবি টানানো বাধ্যতামূলক—এমন বিধান সংবিধানের চার অনুচ্ছেদে শুধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ছিল। এর বাইরে রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রীসহ অন্য কারও ছবি টানানোর কোনো সাংবিধানিক বা আইনি নির্দেশনা নেই।
২০০২ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি বিজ্ঞপ্তি অনুসারে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া ও পরবর্তীতে শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পরিবর্তনের পর নতুন সরকার প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেননি। অর্থাৎ, রাষ্ট্রপতির ছবি টানানোর কোনো নিয়ম বা আইন বর্তমানেও নেই।
কূটনীতিক ও আইনজীবীদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে অনেক দেশে রাষ্ট্রপ্রধানের ছবি দূতাবাস বা হাইকমিশনে টানানোর একটি প্রচলিত রীতি (custom) ছিল। সেই সূত্রে, বিধান না থাকলেও অল্প কিছু মিশনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি রাখা হয়েছিল। এটি কোনো আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে নয়, বরং দেখাদেখি এবং প্রথা হিসেবে।
ফলে যখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মৌখিক নির্দেশনায় বিদেশি মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরিয়ে নিতে বলল, তখন এর আইনি ব্যাখ্যা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো—রাষ্ট্রপতির ছবি টানানোর কোনো বিধানই নেই। আগে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টানানো বাধ্যতামূলক ছিল, যা ৫ আগস্টের পর সরিয়ে ফেলা হয়েছে। খালি জায়গায় অনেক মিশনে রাষ্ট্রপতির ছবি টানানো হয়েছিল, যা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত। তাই রাষ্ট্রপতির ছবি না টানানোই সঠিক ও আইনসঙ্গত সিদ্ধান্ত।
সংক্ষেপে: রাষ্ট্রপতির ছবি অফিস, আদালত বা দূতাবাসে টানানোর কোনো আইনি ভিত্তি নেই। কেবল শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টানানো ছিল সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। সেই বিধান কার্যকর না থাকার পর রাষ্ট্রপতির ছবিও রাখার প্রয়োজন নেই।